ঢাকা,শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

কুতুবদিয়া চ্যানেলের মগনামা অংশে জেগে ওঠা চর

পেকুয়া মগনামার বিশাল চরে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির থাবা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কুতুবদিয়া চ্যানেলের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের পশ্চিমাংশে জেগে ওঠা বিশাল চর দখলদারদের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। উপকূলীয় বন বিভাগের বাধা উপেক্ষা করে চর দখলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন ওই এলাকার একজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি। এভাবে চর দখল অব্যাহত থাকলে বন বিভাগের পক্ষে উপকূল রক্ষায় সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।

জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার মগনামা জেটি ঘাট থেকে শেখ হাসিনা বানৌজা ঘাঁটির উত্তরাংশ পর্যন্ত কুতুবদিয়া চ্যানেলের বিশাল অংশে চর জেগে উঠেছে। এ চরে উপকূলীয় বন বিভাগের প্যারাবন সৃষ্টি করার কথা থাকলেও চরটি দখলবাজদের কবলে চলে যাওয়ায় বনায়ন করা যাচ্ছে না। অতীতে এ চরে উপকূলীয় বন বিভাগ কিছু বনায়ন করলেও বর্তমানে বেশিরভাগ গাছের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। সামান্য কিছু গাছ অবশিষ্ট থাকলেও তা রুগ্‌ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

মগনামা এলাকার বেশ কয়েকজনের অভিমত, মূলত কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে সৃষ্ট চরের মগনামা অংশ দখলের জন্য ওই এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি প্রথমে তার বরফকলের বরফ বিপণনের জন্য একটি জেটি নির্মাণ করেন। পরে জেগে ওঠা বিশাল চরে খুঁটি পুঁতে দখল প্রতিষ্ঠার সব আয়োজন সম্পন্ন করে। বন বিভাগ, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর সমুদ্র সংলগ্ন জেগে ওঠা চর দখল প্রক্রিয়া বন্ধ করতে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করছে না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। মগনামার বেশিরভাগ লোকজন দাবি করেছেন, গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ্‌ চৌধুরী ওয়াসিম শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে কুতুবদিয়া চ্যানেলের বিশাল চর দখলের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ ওই চরের সামান্য উত্তরাংশেই রয়েছে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিট অফিস। সেখানে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের ছনুয়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, এলাকাটি ছনুয়া রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন। সমুদ্র চ্যানেলে জেগে ওঠা চর অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ্‌ চৌধুরী ওয়াসিম।

এ ব্যাপারে বন বিভাগ উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা না পাওয়ায় অবৈধভাবে দখল হওয়া চর উদ্ধার করতে পারছে না। বিষয়টি নিয়ে জবরদখলকারীর সঙ্গে তাদের বিরোধ চলে আসছে।

সংশ্নিষ্টদের মতে, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় উপকূলে প্যারাবন না থাকায় পেকুয়ার বেশ কটি ইউনিয়ন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, মারা গিয়েছিল অসংখ্য মানুষ।

পরিবেশবাদীদের অভিমত, উপকূলীয় বন বিভাগ জরুরি ভিত্তিতে জেগে ওঠা চর দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করে বনায়ন না করলে মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নের লোকজন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পাবে না।

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পরে বেসরকারি সংস্থা ও উপকূলীয় বন বিভাগ সমুদ্র সংলগ্ন জেগে ওঠা চরে বনায়ন করলেও বর্তমানে বেশিরভাগ গাছের অস্তিত্ব নেই। পেকুয়ার পরিবেশ সচেতন বেশ কজন সংবাদকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, উপকূলীয় এলাকার চর দখলকারীরা বেশিরভাগই প্রভাবশালী। তাই তারা পরিবেশ ধ্বংস করে চর দখল করলেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগে সদ্য যোগদান করা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, তিনি গত বুধবার বিকেলে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। খোঁজখবর নিয়ে চর দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং জেগে ওঠা চর জবরদখলকারীদের কবল থেকে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় পুনঃউদ্ধারের প্রচেষ্টা চালানো হবে।

পেকুয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসিফ আলী জিনাত চকরিয়া নিউজকে জানান, তিনি এ পর্যন্ত কুতুবদিয়া চ্যানেলের চর দখল-সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাননি। তবে তিনি যাচাই করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

চর দখলের অভিযোগে অভিযুক্ত মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ্‌ ওয়াসিমের সঙ্গে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে তার মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

পাঠকের মতামত: